‘এক দেশ এক নির্বাচন থেকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, ইউনিফর্ম সিভিল কোড, বিনামূল্যে রেশন’, ইশতেহারে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি মোদির

প্রথম দফায় লোকসভা ভোট হবে আগামী শুক্রবার। তার চার দিন আগে ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপি। রবিবার সকালে ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা, ইস্তাহার কমিটির প্রধান তথা কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-সহ বিজেপির অন্য শীর্ষনেতারা। বিজেপির ‘সঙ্কল্পপত্রে’ ‘মোদির গ্যারান্টি’র উপর জোর দেওয়া হয়েছে।  নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, ‘আজ ভারতরত্ন ডঃ বিআর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী, আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। আমরা সবাই জানি যে তিনি সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছিলেন। তাঁর পথ অনুসরণ করে, বিজেপি সর্বদা সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছে।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে ইশতেহার কমিটি ২বার বৈঠক করেছে। বিজেপি তার ঘোষণাপত্রের জন্য ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি সুপারিশ সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে ৪০০,০০০টি NaMo অ্যাপ থেকে এসেছে এবং ১.১ মিলিয়ন ভিডিও-র মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে যে বিজেপি ২৭ সদস্যের নির্বাচনী ইশতেহার কমিটি গঠন করেছিল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। এছাড়াও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে কোঅর্ডিনেটর হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে সহ কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছিল। তারা ছাড়াও এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে ২৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। দলের ইস্তাহার প্রকাশ হওয়ার পর বক্তব্য রাখতে উঠে মোদী বলেন, “মোদীর গ্যারান্টি এই যে, বিনামূল্যে রেশন বণ্টনের প্রকল্প আগামী ৫ বছরের জন্য চালু থাকবে।” বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি

বাড়ি গ্যাস পৌঁছে যাবে বলেও জানান তিনি। গরিব পুষ্টিযুক্ত খাবার পাবে। জন ঔষধি কেন্দ্রে ৮০ শতাংশ কম দামে ওষুধ পাওয়া যাবে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বীমা চালু থাকবে। ৭০ বছরের ঊর্ধ্বের সমস্ত বয়স্ক মানুষকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। রূপান্তরকামীরাও আয়ুষ্মান যোজনার সুবিধা পাবেন। পাশপাশি বলা হয়েছে আবাস যোজনায় ৪ কোটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও ৩ কোটি বাড়ি তৈরির সংকল্প নেওয়া হচ্ছে। বিজেপি জানিয়েছে এবার পাইপ লাইনে রান্নার গ্যাস পৌঁছে যাবে বাড়ি বাড়ি। এই লক্ষ্যে কাজ করবে সরকার। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিল কম করার পাশাপাশি আমজনতা যাতে বিদ্যুৎ থেকে রোজগার করতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করবে সরকার। একই সঙ্গে সূর্য ঘর বিনামূল্যে বিদ্যুৎ যোজনায় এখনও পর্যন্ত ১ কোটি মানুষ নথিভুক্ত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বলা হয়েছে এতদিন মুদ্রা যোজনার সীমা ১০ লাখ ছিল। আগামী দিনে তা ২০ লাখ করা হবে। দাবি করা হয়েছে এতে গ্রাম বা শহরে নতুন উদ্যোগ তৈরি হবে। মোদির গ্যারান্টিতে বলা হয়েছে যাদের কেউ গুরুত্ব দেয়নি মোদি তাদের পুজো করেন। সারাদেশে রাস্তার পাশে যারা ভ্যান রিক্সার উপর জিনিসপত্র বিক্রি করেন। এতদিন তাদের সরকার ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত সাহায্য করত এবার সেই সাহায্যের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। শুধু তাই নয় এই প্রকল্প প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। লাখপতি দিদি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে এখনও পর্যন্ত দেশে এক কোটি লাখপতি দিদি হয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে তিন কোটি লাখপতি দিদি হবেন। মহিলাদের রোজগার, স্বাস্থ্য এবং স্বনির্ভর করে তুলতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে বিজেপির ইশতেহারে। ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে সারাদেশে ডেয়ারি শিল্পে এবার বিশেষ

গুরুত্ব দেবে সরকার। বিশ্বের সবথেকে বড় পুষ্টি হাব হিসেবে গড়ে তোলা হবে ভারতকে। এজন্য একগুচ্ছ প্রকল্প আনবে বিজেপি সরকার এমনটাও জানানো হয়েছে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, প্রকৃতির সামঞ্জস্য রক্ষায় প্রাকৃতিক কৃষি কাজে জোর দেওয়া হবে। জনজাতি সমাজকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী বছর থেকে বিরসা মুন্ডার ১৫০ তম জন্ম জয়ন্তীতে ‘জনজাতীয় গৌরব অভিযান’ পালন করা হবে। বিজেপি জানিয়েছে, উন্নতির পাশাপাশি সংস্কৃতিতেও বিশ্বাস করে বিজেপি। দেশে পর্যটনের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তাকে উন্মোচন করা এখনও বাকি রয়েছে। বহু ধর্মীয় স্থানের উন্নতি করা হবে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। ক্ষমতায় এলে ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করার অঙ্গীকার ভারতীয় জনতা পার্টির ইশতেহারে। সবদিক থেকে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলাই লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। দেশের স্বার্থে ভারতীয় জনতা পার্টি কঠিন ও বড় সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয় না বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি জানিয়েছেন, এক দেশ এক নির্বাচন বাস্তবায়িত করা হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা হবে। ২০৩৬ সালে অলিম্পিক্স আয়োজনের জন্য দরপত্র আহ্বানের কথা বলা হলেও মোদীর ভাষণে গুরুত্ব পেয়েছে জনমুখী প্রকল্প সংক্রান্ত গবেষণাই। ২০২৫ সালকে ‘জনজাতি গৌরব বর্ষ’ হিসাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দেশের জনজাতি ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। গত দশ বছরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে করা পদক্ষেপ করেছে বিজেপি সরকার। একইভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ চলতে থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন দুর্নীতিগ্রস্তরা জেলে গিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন ৪ জুনের ফল ঘোষণার পরেই সরকার দ্রুতগতিতে কাজ করা শুরু করবে। 

error: Content is protected !!