আজ সুপ্রিমকোর্টে শুনানি ছিল আরজিকর মেডিক্যাল-কলেজে তরুণী চিকিৎসক খুনের মামলার । যার দিকেই তাকিয়েছিল রাজ্য তথা দেশবাসী। এদিন মামলার শুরুতেই সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন আইনজীবীরা। বলা হয়, আর জি করের ঘটনা গুগলে সার্চ করলেই উইকিপিডিয়া নির্যাতিতার নাম দেখাচ্ছে। তাতে ক্ষোভপ্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি উইকিপিডিয়াকে নির্দেশ দেন অবিলম্বে নির্যাতিতার নাম মুছতে হবে। তারপরেই এদিন আরজিকর সংক্রান্ত মামলা শুরু হয়। যাকে কেন্দ্র করে কিছুটা তর্কাতর্কি হয় শীর্ষ আদালতে। আজ, মঙ্গলবার পূর্বের নির্দেশ মতো তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। সেই রিপোর্ট দেখে তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, ‘সিবিআই রিপোর্টে যা লিখেছে, তা খুবই উদ্বেগের। আমরা এই রিপোর্ট দেখে বিচলিত। তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে।’ এর পরেই প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘সিবিআই ঘুমিয়ে নেই। তারা তদন্ত করছে। তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। তদন্ত চলছে। এই অবস্থায় রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে তদন্তপ্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যে সব দিকে নজর দিতে বলেছি, সিবিআই সেই সব দিকেই দেখছে। গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে আনার দিকে এগোচ্ছে সিবিআই। কেউ জটিলতা করছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে সিবিআই। মৃতদেহের চালান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কোনও প্রমাণ নষ্ট হয়েছে কিনা সেটাও দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।’ হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য, সেই বিষয়ে জানতে চান প্রধান বিচারপতি। যার উত্তরে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, ‘রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য শৌচাগার, বিশ্রামকক্ষ, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে। আর জি কর হাসপাতালে এখন ৪১৫টি ক্যামেরা লাগানো হবে।’ অপরদিকে সিনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবী আদালতে রাজ্যের চালু করা রাত্রীসাথী প্রসঙ্গে কয়েকটি আপত্তি জানান। বিশেষ করে মহিলাদের রাতে যতটা কম সিফ্টে কাজ করার এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। যার উত্তরে দেশের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। মহিলারা রাতে কাজ করতে পারবেন না, এ কথা বলতে পারেন না। মহিলা আর পুরুষ এখন আলাদা নয়। মহিলা চিকিৎসকরা সব পরিস্থিতিতে কাজ করতে চান। তাঁদের সব পরিস্থিতিতে কাজ করা উচিত। রাজ্যকে এটি সুনিশ্চিত করতে হবে।’ অবিলম্বে সেই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করতেও নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। যার জবাবে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, ‘রাত্রীসাথী বিজ্ঞপ্তির ৫ এবং ৬ নম্বর অংশ নিয়ে যে আপত্তি রয়েছে, তা মুছে ফেলা হবে।’ এদিনের শুনানিতে ফের একবার জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কপিল সিব্বল। যদিও জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়ে নতুন কোনও নির্দেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। তবে এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ‘জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরা উচিত।’ সেই বিষয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবী ইন্দিরা জয় সিং জানান, ‘আজ জিবি বডির বৈঠক রয়েছে। তারপরেই কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আজ সুপ্রিম কোর্টের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ-
১) ২০০৬ থেকে কলকাতা পুলিশের পোস্টমর্টেম চালান নয় রিকুইজিশন ব্যবহৃত হয়। সেই পোস্টমর্টেম রিকুইজিশন আজ কোর্টে পেশ হয়েছে রাজ্যের পক্ষ থেকে।
২) মাত্র ২৭ মিনিটের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী প্রমাণ করতে পেরেছেন ৭-৮ ঘন্টার ভিডিও ফুটেজ সহ চারটি হার্ডডিস্ক সিবিআই কি হ্যান্ড ওভার করা হয়েছিল,সিবিআই তা সই করেই নিয়েছে। এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাতে সম্মতি জানিয়েছেন।
সিবিআইয়ের তিলোত্তমা মামলার তদন্তের গতি নিয়ে মহামান্য আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।তবে মামলার অন্যান্য ডিটেইলস(খুন,ধর্ষণ,প্রমাণ লোপাট) যেটা সিবিআই স্ট্যাটাস রিপোর্ট দিয়েছিল তা নিয়ে কোন মন্তব্য এখানে করবেন না,কারণ তা তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মত দিয়েছেন।
৩) কি কি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে গ্রহণ করা হয়েছে এ বিষয়ে একটি এফিডেভিট পেশ করেছেন রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী। সেই এফিডেভিটে হাসপাতালে সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সিজিআই। আউটসোর্স সিকিউরিটি দের যেন সমস্ত ভেরিফিকেশন করে তবেই হাসপাতালে নিয়োগ করা হয় এরকম একটি অবজারভেশন দিয়েছেন মহামান্য আদালত। রাজ্যের আইনজীবী সিভিকের ব্যাপারটা মেনে নিয়ে জানিয়েছেন উর্দিধারী পুলিশই নিয়োগ করা হবে হাসপাতালে,ট্রেনিং চলছে। ১৪ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা হবে জানিয়েছেন রাজ্যের আইনজীবী।
৪) হাসপাতালে ডাক্তারদের রেস্টরুমে বায়োমেট্রিকের ব্যবস্থা করতে বলেছেন মহামান্য আদালত। রাজ্যের আইনজীবী তা মেনে নিয়েছেন। ১৪ দিনের মধ্যে এটারও ব্যবস্থা হবে।
৫) রাত্রির সাথী প্রকল্পে মেয়েদের নাইটডিউটি করা না করা নিয়ে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মেয়েরা নাইট ডিউটি না করলে লিঙ্গ বৈষম্য সৃষ্টি হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন জুনিয়ার ডাক্তারদের পক্ষের আইনজীবী। মহামান্য আদালত সহমত হন। পরে রাজ্যের আইনজীবী বলেন রাত্রির সাথী প্রকল্পে মেয়েরা নাইট ডিউটি করবে না এমন কিছুই বলার নেই বলা আছে বিষয়টা অপশনাল। মহামান্য আদালত তখন তাদের অবজারভেশন এই বিষয়ে বদলাবেন বলে জানান।
৬) রাজ্যের তরফে পেশ করা সিকিউরিটি এফিডেভিট পড়ে মহামান্য আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন এই এফিডেভিট অনুসারে রাজ্যের আয়োজিত হাসপাতালের বর্ধিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক।এবার জুনিয়ার ডাক্তারদের কাজে জয়েন করতে কোন অসুবিধা হবার কথা নয়।
৭) তিনি বলেন তা ন তারিখের অবজারভেশনই বজায় থাকছে। অর্থাৎ কাজে জয়েন করতে হবে। না করলে স্টেট যেকোন স্টেপ নিতে পারে। তিনি ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে।
৮) রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ভালো লড়াই দেন। জুনিয়ার ডাক্তারদের পক্ষের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং আগের আইনজীবী গীতা লুথরার তুলনায় অনেক ভোকাল ছিলেন। তিনি আবেগ দিয়ে চেষ্টা করেন যাতে জুনিয়ার ডাক্তারদের কোন ক্ষতি না হয় এবং তাতে কিছুটা হলেও সফল হন..
৯) সিবিআই-এর আইনজীবী তুষার মেহতা এই ২৭ মিনিটের ভিডিওর পর আর কোন ভোকাল পার্ট নেননি, শেষে ওনার পিছনে বসা এক টাক মাথার আইনজীবীর মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে, ,”আপনি রাজনৈতিক নেতার মত আচরণ করবেন না”, বলে মহামান্য আদালত।