দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি নিয়ে ক্যাগ তুলোধোনা করেছিল কেন্দ্রকে। আর্থিক বেনিয়মের উল্লেখ করে স্পষ্ট জানানো হয়, অনুমোদিত অর্থ বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ১৪ গুণ বেশি টাকা খরচ করেছে মোদি সরকার। রিপোর্ট বলছে, ভারতমালা প্রকল্পে ওই এক্সপ্রেসওয়েতে এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে ১৮.২ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিল মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ হঠাৎ প্ল্যান বদল করায় হরিয়ানার ওই অংশে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে খরচ পড়ে ২৫১ কোটি টাকা। আগস্ট, ২০২৪। ঠিক এক বছরের মাথায় ফের ক্যাগের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল এনডিএ সরকার। এবার বন্দে ভারত প্রকল্পে। জানানো হল, স্রেফ রেলমন্ত্রকের হঠকারিতায় মোদির সাধের এই প্রকল্পে গচ্চা গিয়েছে ৫৪ কোটি টাকা। মূল্যবৃদ্ধির চাপে যখন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস চরমে, তখন পরপর কোটি কোটি টাকার কেন্দ্রীয় ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ ঘিরে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে দেশজুড়ে। কারণ, দু’বারই কাঠগড়ায় মোদি-শাহের সরকার। বন্দে ভারতের রেক তৈরি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ খাতে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা এবং সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ছ’টি কোচ। মোট খরচ হয়েছিল ৫৪ কোটি টাকার আশেপাশে। বন্দে ভারত প্রকল্পের এই টাকার উপরেই এখন নজর ক্যাগের। কারণ, হঠাৎ করে রেলমন্ত্রক ‘প্ল্যান’ বদলে ফেলায় এই টাকা স্রেফ জলে গিয়েছে। ক্যাগ তার রিপোর্টে জানিয়েছে, দু’বছরে ২৪০টি বন্দে ভারত কোচ তৈরির জন্য প্রথমে একধরনের পদ্ধতির (প্রোডাকশন প্রোগ্রাম) অনুমোদন দিয়েছিল রেলমন্ত্রক। সেইমতো ২০১৯ সালের মে থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ) ৮ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছ’টি ট্রেন-১৮ ‘কোচ শেল’ তৈরি করে। পাশাপাশি ৬৪ কোটি টাকা দেওয়াও হয় আইসিএফকে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি টাকার বিভিন্ন উপকরণ কেনা হয়, যা একমাত্র পূর্বে অনুমোদিত পদ্ধতি মেনে ট্রেন কোচ তৈরি করলেই ব্যবহার করা সম্ভব হতো। কিন্তু রেল আচমকাই সেই অনুমোদিত পদ্ধতি পাল্টে ফেলে। নতুন পরিকাঠামোগত সংস্কারের (এক্ষেত্রে ট্র্যাকশন সিস্টেম) পথে হাঁটতে শুরু করে। ফলে ওই ছ’টি ট্রেন কোচ এবং কয়েক কোটি টাকার উপকরণ কার্যত অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে। উল্লিখিত কোচগুলিও চালানো সম্ভব নয়। সেগুলি ব্যবহার করা সম্ভব হতো শুধুমাত্র পূর্বে অনুমোদিত পদ্ধতি মেনে চললেই। অর্থাৎ, একটি পদ্ধতির অনুমোদন সত্ত্বেও আচমকা তাতে পরিবর্তন। আর রেলমন্ত্রকের এই হঠকারিতায় বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন রেল বোর্ড। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে অবশ্য ‘বন্দে ভারত’ শব্দবন্ধটির উল্লেখ করেনি ক্যাগ। বলা হয়েছে ‘ট্রেন-১৮’। যা আদতে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসেরই প্রযুক্তিগত পরিভাষা।
কিন্তু এই অর্থ অপচয় থেকে দুর্নীতির গন্ধ মিলল কীভাবে? সংসদে পেশ করা ওই রিপোর্টে ক্যাগ জানিয়েছে, আইসিএফের তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ফলে ওয়াকিবহাল মহল প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, তারপরেও কেন এ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি? তাহলে কি জেনেবুঝেই এ কাজ করেছে রেল? ক্যাগও সাফ জানিয়েছে, রেলের জবাব একেবারেই সন্তোষজনক নয়। কেন হঠাৎ এই প্রকল্পের সার্বিক পরিকাঠামো পরিবর্তনের প্রয়োজন হল, তার সঠিক ব্যাখ্যা মেলেনি। অর্থাৎ, বেনিয়মের রিপোর্টে প্রতিষ্ঠিত ‘দুর্নীতি’র তত্ত্বই।